নিদ্রামগ্ন হওয়ার মতোই মারাত্মক ভাবে যে জলমগ্ন হওয়া যায় তা এই শহর খুব ভালোভাবে বুঝিয়ে দেওয়ায় খামতি রাখেনা...
এক-কোমর জল, হাঁটু ছোঁয়া জল, পায়ের পাতা ভেজানো জল, জল-জল... সমস্ত রকমফেরই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সাজানো আছে ; কোনোটা এই গলিতে তো কোনোটা ওই রাস্তায়, কোনো কোনোটা আবার আন্ডারপাসে, কোনোটা বড়রাস্তায়...
সেই জলে ভাসাভাসি করে ভালো -খারাপ সবই...
তবে, সহজে ভেসে যায়না কিছু,এই লাইফ-ইনশিওরেন্স-বিশ্বাসী শহরে জমে থাকেই বেশী...
অটো ঘুরপথে ঘুরে ঘুরে পৌঁছায়,রিক্সার ভাড়া বাড়ে দুদ্দাড়িয়ে, দু'চাকা -চার চাকা বুক জলে দাঁড়িয়ে দীর্ঘনি:শ্বাস ফেলে...কিছু জামা বারান্দার তারে অসতর্ক-ভেজে বারবার আর বাকিরা আধভেজা হয়ে মুখগোমড়া করে থাকে ঘরের ভেতর...
পরিপাটি শহর... জলে ভিজে, স্যাঁতস্যাতে শার্ট পরে, মোবাইল -ল্যাপটপ সামলাতে সামলাতে অফিসে ছোটে, জলে মিশে ট্র্যাফিক লাইট, শপিং মল, বাস-ট্যাক্সি-ট্রাম সব একরঙা হয়ে গিয়ে কেমন যেন অগোছালো হয়ে যায়...
জলের ভেতর দিয়ে সাবধানী চলাচলের গায়ে ছিটকে আসে চাকার নীচ থেকে পিছলে আসা জল!
খবরের কাগজের শিরোনাম বলে ' টানা তিনদিন চলবে ভারী বর্ষণ, শহরবাসীদের দুর্ভোগ'...
দেখে হাসি পায় বেনামীর - "বর্ষাকাল, ভয় পায় নাকি কেউ!"
"ঠিক বলেছিস!! ছাতা-টাতা সব জলাঞ্জলি দিয়ে বৃষ্টি মাথায় বুক চিতিয়ে বেরিয়ে পড়া উচিত"- চোরা ঠাট্টা মিশিয়ে বিপক্ষের গোলকিপিং করতে থাকে বদনাম...
টিপটিপ করে বৃষ্টি শুরুর থেকেই তর্ক চলছে...
"এই এক্ষুণি জোরে শুরু হয়ে যাবে রে" -দ্রুত পা চালায় বদনাম...
"আমরা তো সব নুনের পুতুল... না রে!"- যুক্তি দিতে দিতে তাল মেলাতে হুড়োহুড়ি করে বেনামী...
"কারও কাছে ছাতা নেই কিন্তু "- বেনামীর হাত ধরে একটানে সরিয়ে আনে বদনাম...
সঙ্গে সঙ্গে ঝেঁপে বৃষ্টি...
ঝুলবারান্দার নীচের ছাউনিতে দাঁড়িয়ে, বেনামী তখন একেবারে চুপ...
মুখে এসে লাগছে বৃষ্টির ছাঁট...
বদনাম দেখে... ঝরতে থাকা আকাশটার দিকে তাকিয়ে আছে বেনামী, ওর চশমার কাচে জলের বিন্দু...
তারপর বাঁ হাতে চশমা খুলে মুখটা এগিয়ে দিয়েছে বৃষ্টিতে...
বেনামী হাসছে... তবু মাঝে মাঝে যেন কেঁপে কেঁপে উঠছে ওর ঠোঁট দুটো...
বদনাম... অপলক...
আলতো উঠে আসে বেনামীর ডান হাত...খুঁজতে থাকে কী যেন....
ওর হাতটা ছুঁয়ে দেয় বদনাম...
বেনামী আঁকড়ে ধরে...
বৃষ্টি বাড়তে থাকে...
পিঠ বাঁচানো লোকেরা সব মাথা, চটি বাঁচিয়ে দুদ্দাড় দৌড়ে এতক্ষণে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে হয়তো...
রাস্তা খালি...
রোয়াকের লাল মেঝে শুধু বেবাক ভিজছে...
ঘরের ভেতরে চুপচাপ বসে বৃষ্টি দেখা বদনামের বেশী প্রিয়...
বৃষ্টি আর কবিতা... আর ছোটবেলার মতো... আঁকার খাতায় জলরঙ...
বেনামী চায় বৃষ্টি ভিজতে...
তর্ক হয় দু'জনের...
বদনাম অবাক হয়ে দেখে... শান্ত মেয়েটা বৃষ্টি পড়লে কেমন এলোমেলো হয়ে যায়... কী অদ্ভুত চঞ্চল!
আর বদনাম নিজে!
ক্রমাগত শান্ত, আরও শান্ত.... ভেতরের ভবঘুরে মানুষটাকে এভাবে ঘরকুনো হতে দেখে , ও নিজেকেই বিশ্বাস করতে পারেনা....
বদনাম.... শুধু দেখতে থাকে বেনামীকে...
ওর হাতটা মুঠোর মধ্যে নিয়ে আড়াল থেকে যতটুকু বৃষ্টি পাওয়া যায় ততটুকুতেই ভিজছে বেনামী...
ওর থেকে আরও একটু ভেতর দিকে দাঁড়িয়ে বদনাম... বৃষ্টি পাচ্ছে না...
আর্দ্র-শীতল চারপাশ...স্বভাব-টানেই ও ভেতরদিকে গুটিয়ে যাচ্ছে... একটু একটু করে...
কিন্তু ওর হাত ছুঁয়ে থাকা বেনামীর হাতের ওই উষ্ণতা আজ ওকে কী যেন একটা বলছে....বেনামীর গলায় শোনা লালন ফকিরের ওই গানটা বারবার কানে বাজছে...
কেমন যেন একটা আলগা হওয়ার ডাক... একটা ভেসে যাওয়ার অনুভূতি...
বেনামী তখনও লক্ষ্য করেনি...এই অঝোর বৃষ্টি সামনে নিয়ে ও এতটা চুপ করে আছে কী করে! কী করে এখনও আড়ালের ভেতর দাঁড়িয়ে আছে ও!কেমন যেন একটা ভেতরদিকের টান, একটা থিতিয়ে পড়ার মতো অনুভব... বদনামের গোধূলি-মাখা ঘরটা মনে পড়ে ওর...
বারবার...
ভীষণ জোরে একটা বাজ পড়ে...
হালকা গোলাপী আলোয় চোখাচোখি হয়ে যায় দু'জনের...
বদনামের হাতটা মুঠোয় ধরে, আরও একটু কাছে টেনে, বারান্দার আরও একটু ভেতরে দিকে সরে যায় বেনামী...
বৃষ্টি-শহরের নিবিড় আলো চোখে মেখে ওরা খানিকক্ষণ চুপ....
বদনামের হাতের পাতা আঙুলে আঁকড়ে নিয়ে... নিজের বুকের ওপর রাখে বেনামী....
..... স্মৃতি ওলটপালট করে তখন শান্ত হয়ে যাচ্ছে অনেক অস্থিরতা... মৃদু হয়ে যাচ্ছে অনেক চিৎকার... অনেক কথা....
বদনাম... বেনামীকে একবার নাম ধরে ডাকে...
তারপর বেনামীর হাত ধরে দৌড়ে নামে রাস্তায়....
অক্লান্ত, অঝোর বৃষ্টির নীচে ভিজে যায় দু'জনেই.... আপাদমস্তক...
বৃষ্টি আরও বাড়ে...
ভীষণ বৃষ্টির নীচে দাঁড়িয়ে ওরা হাসছে ... দু'জনে...
বেনামী ভাবে - বদনাম ওর ঘর না ভাঙচুর...?
এক-কোমর জল, হাঁটু ছোঁয়া জল, পায়ের পাতা ভেজানো জল, জল-জল... সমস্ত রকমফেরই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সাজানো আছে ; কোনোটা এই গলিতে তো কোনোটা ওই রাস্তায়, কোনো কোনোটা আবার আন্ডারপাসে, কোনোটা বড়রাস্তায়...
সেই জলে ভাসাভাসি করে ভালো -খারাপ সবই...
তবে, সহজে ভেসে যায়না কিছু,এই লাইফ-ইনশিওরেন্স-বিশ্বাসী শহরে জমে থাকেই বেশী...
অটো ঘুরপথে ঘুরে ঘুরে পৌঁছায়,রিক্সার ভাড়া বাড়ে দুদ্দাড়িয়ে, দু'চাকা -চার চাকা বুক জলে দাঁড়িয়ে দীর্ঘনি:শ্বাস ফেলে...কিছু জামা বারান্দার তারে অসতর্ক-ভেজে বারবার আর বাকিরা আধভেজা হয়ে মুখগোমড়া করে থাকে ঘরের ভেতর...
পরিপাটি শহর... জলে ভিজে, স্যাঁতস্যাতে শার্ট পরে, মোবাইল -ল্যাপটপ সামলাতে সামলাতে অফিসে ছোটে, জলে মিশে ট্র্যাফিক লাইট, শপিং মল, বাস-ট্যাক্সি-ট্রাম সব একরঙা হয়ে গিয়ে কেমন যেন অগোছালো হয়ে যায়...
জলের ভেতর দিয়ে সাবধানী চলাচলের গায়ে ছিটকে আসে চাকার নীচ থেকে পিছলে আসা জল!
খবরের কাগজের শিরোনাম বলে ' টানা তিনদিন চলবে ভারী বর্ষণ, শহরবাসীদের দুর্ভোগ'...
দেখে হাসি পায় বেনামীর - "বর্ষাকাল, ভয় পায় নাকি কেউ!"
"ঠিক বলেছিস!! ছাতা-টাতা সব জলাঞ্জলি দিয়ে বৃষ্টি মাথায় বুক চিতিয়ে বেরিয়ে পড়া উচিত"- চোরা ঠাট্টা মিশিয়ে বিপক্ষের গোলকিপিং করতে থাকে বদনাম...
টিপটিপ করে বৃষ্টি শুরুর থেকেই তর্ক চলছে...
"এই এক্ষুণি জোরে শুরু হয়ে যাবে রে" -দ্রুত পা চালায় বদনাম...
"আমরা তো সব নুনের পুতুল... না রে!"- যুক্তি দিতে দিতে তাল মেলাতে হুড়োহুড়ি করে বেনামী...
"কারও কাছে ছাতা নেই কিন্তু "- বেনামীর হাত ধরে একটানে সরিয়ে আনে বদনাম...
সঙ্গে সঙ্গে ঝেঁপে বৃষ্টি...
ঝুলবারান্দার নীচের ছাউনিতে দাঁড়িয়ে, বেনামী তখন একেবারে চুপ...
মুখে এসে লাগছে বৃষ্টির ছাঁট...
বদনাম দেখে... ঝরতে থাকা আকাশটার দিকে তাকিয়ে আছে বেনামী, ওর চশমার কাচে জলের বিন্দু...
তারপর বাঁ হাতে চশমা খুলে মুখটা এগিয়ে দিয়েছে বৃষ্টিতে...
বেনামী হাসছে... তবু মাঝে মাঝে যেন কেঁপে কেঁপে উঠছে ওর ঠোঁট দুটো...
বদনাম... অপলক...
আলতো উঠে আসে বেনামীর ডান হাত...খুঁজতে থাকে কী যেন....
ওর হাতটা ছুঁয়ে দেয় বদনাম...
বেনামী আঁকড়ে ধরে...
বৃষ্টি বাড়তে থাকে...
পিঠ বাঁচানো লোকেরা সব মাথা, চটি বাঁচিয়ে দুদ্দাড় দৌড়ে এতক্ষণে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে হয়তো...
রাস্তা খালি...
রোয়াকের লাল মেঝে শুধু বেবাক ভিজছে...
ঘরের ভেতরে চুপচাপ বসে বৃষ্টি দেখা বদনামের বেশী প্রিয়...
বৃষ্টি আর কবিতা... আর ছোটবেলার মতো... আঁকার খাতায় জলরঙ...
বেনামী চায় বৃষ্টি ভিজতে...
তর্ক হয় দু'জনের...
বদনাম অবাক হয়ে দেখে... শান্ত মেয়েটা বৃষ্টি পড়লে কেমন এলোমেলো হয়ে যায়... কী অদ্ভুত চঞ্চল!
আর বদনাম নিজে!
ক্রমাগত শান্ত, আরও শান্ত.... ভেতরের ভবঘুরে মানুষটাকে এভাবে ঘরকুনো হতে দেখে , ও নিজেকেই বিশ্বাস করতে পারেনা....
বদনাম.... শুধু দেখতে থাকে বেনামীকে...
ওর হাতটা মুঠোর মধ্যে নিয়ে আড়াল থেকে যতটুকু বৃষ্টি পাওয়া যায় ততটুকুতেই ভিজছে বেনামী...
ওর থেকে আরও একটু ভেতর দিকে দাঁড়িয়ে বদনাম... বৃষ্টি পাচ্ছে না...
আর্দ্র-শীতল চারপাশ...স্বভাব-টানেই ও ভেতরদিকে গুটিয়ে যাচ্ছে... একটু একটু করে...
কিন্তু ওর হাত ছুঁয়ে থাকা বেনামীর হাতের ওই উষ্ণতা আজ ওকে কী যেন একটা বলছে....বেনামীর গলায় শোনা লালন ফকিরের ওই গানটা বারবার কানে বাজছে...
কেমন যেন একটা আলগা হওয়ার ডাক... একটা ভেসে যাওয়ার অনুভূতি...
বেনামী তখনও লক্ষ্য করেনি...এই অঝোর বৃষ্টি সামনে নিয়ে ও এতটা চুপ করে আছে কী করে! কী করে এখনও আড়ালের ভেতর দাঁড়িয়ে আছে ও!কেমন যেন একটা ভেতরদিকের টান, একটা থিতিয়ে পড়ার মতো অনুভব... বদনামের গোধূলি-মাখা ঘরটা মনে পড়ে ওর...
বারবার...
ভীষণ জোরে একটা বাজ পড়ে...
হালকা গোলাপী আলোয় চোখাচোখি হয়ে যায় দু'জনের...
বদনামের হাতটা মুঠোয় ধরে, আরও একটু কাছে টেনে, বারান্দার আরও একটু ভেতরে দিকে সরে যায় বেনামী...
বৃষ্টি-শহরের নিবিড় আলো চোখে মেখে ওরা খানিকক্ষণ চুপ....
বদনামের হাতের পাতা আঙুলে আঁকড়ে নিয়ে... নিজের বুকের ওপর রাখে বেনামী....
..... স্মৃতি ওলটপালট করে তখন শান্ত হয়ে যাচ্ছে অনেক অস্থিরতা... মৃদু হয়ে যাচ্ছে অনেক চিৎকার... অনেক কথা....
বদনাম... বেনামীকে একবার নাম ধরে ডাকে...
তারপর বেনামীর হাত ধরে দৌড়ে নামে রাস্তায়....
অক্লান্ত, অঝোর বৃষ্টির নীচে ভিজে যায় দু'জনেই.... আপাদমস্তক...
বৃষ্টি আরও বাড়ে...
ভীষণ বৃষ্টির নীচে দাঁড়িয়ে ওরা হাসছে ... দু'জনে...
বেনামী ভাবে - বদনাম ওর ঘর না ভাঙচুর...?
No comments:
Post a Comment