গতকাল সারারাত ভীষণ বৃষ্টি, ঝড়।
ফেব্রুয়ারীর শেষে এমন একটা ভেজা-সকাল আসবে হয়তো ভাবেনি শহরের কেউই।
জানলার পাশে শুয়ে শুয়ে বেনামীর সারারাত কেটে গেছে অদ্ভুত একটা ঘোরে।
বৃষ্টি বেনামীর প্রিয়।
বসন্ত প্রিয়, বদনামের।
সেই ঘোরের মধ্যে, আবছা স্মৃতির মতো জেগে আছে পর্দার পাশ থেকে দেখা অঝোর রাতের একফালি ছবি।
জেগে আছে অভ্যস্ত কথোপকথনের এলোমেলো কিছু উচ্চারণ।
সদ্য রাত, ফোনের ওপার থেকে খুব মৃদু ভেসে আসছে গান - " বসন্তের এই মাতাল সমীরণে, আজ জ্যোৎস্না রাতে..."।ক্ষণিকের প্রিয় নীরবতা, তারপর প্রথমবার
কথা বলে বদনাম - " অয়েলের কাজটা নিয়ে বসেছি "।
বেনামী পাশ ফেরে, জানলা দিয়ে ঘন হাওয়া ভেসে আসছে, আসছে মেঘ ডাকার শব্দ।
বেনামী চুপ করে থাকে।
গানের সুর, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ, তেলরঙের গন্ধ, আর বেনামীর নিরুচ্চার প্রত্যুত্তর গাঢ় হয়ে ঘিরে থাকে বদনামকে।
বদনাম, রঙ দিতে থাকে একের পর এক।
মেঘ ডাকার শব্দ বাড়ে।
আর ঝোড়ো হাওয়ার ভেতরে
ভেতরে, নীরবতা ভেঙে কথা বলে দু'জনের কন্ঠস্বর।
কন্ঠস্বর ছুঁয়ে দেয় একে অপরের হাতের পাতা, কপাল থেকে সরিয়ে দেয় চুল, জিজ্ঞেস করে সারাদিনের কথা...
একটা পাশাপাশি বসে থাকার অনুভুতি , কাছাকাছি আসার স্পন্দন...
বসন্তের রাতে, ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে।
ঘুম-ঘোরে তলিয়ে যেতে যেতে বেনামী বুঝতে পারে বৃষ্টি বাড়ছে। বদনামের ঘরের ওই গান ওকে আতুর
করে রাখে।
বদনাম জানে, অজান্তে ঘুমিয়ে পড়া বেনামীর মুখে এসে পড়ছে বৃষ্টির ছাঁট, ভেজা হাওয়ায় ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে বেনামীর গা।
ওর ইচ্ছে করে বেনামীর গায়ের শীতলতা ছুঁয়ে দিতে।
বৃষ্টি বেনামীর প্রিয়।
বসন্ত প্রিয়, বদনামের।
বসন্তের রাতে, রাতভোর বৃষ্টি।
বদনাম রঙের ওপর রঙ চাপায়।
শেষ রাত। বারান্দার দিকের খোলা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে বদনাম। স্ফুটনোন্মুখ একটা সকাল। মৃদু হয়ে আসা বৃষ্টি। ঝরে পড়া পাতা, ফুল।
পিছনে ক্যানভাসে একটা লালে ঢাকা কৃষ্ণচূড়া, আর সেই কৃষ্ণচূড়া ভিজে যাচ্ছে ভীষণ বৃষ্টিতে।
ঘরে গতরাতের গান এখনও - " যদি আমায় পড়ে তাহার মনে..."।
বুকপকেটে একটা ছোট্ট কম্পন।
-" নাম দিস, বসন্ত-বারিষ"।
বৃষ্টি বেনামীর প্রিয়?
বসন্ত প্রিয়, বদনামের?
No comments:
Post a Comment