শহরের নাকি মন নেই, গান নেই, ক্যানভাস নেই...
ট্র্যাফিক আর কংক্রিটে আটক নাকি সব...
l
শহরে নাকি রাগ করলে রোদ হয় না, মনখারাপ হলে মেঘ হয়না, হয়না লুকিয়ে -দেখা কনে দেখা বিকেল- ঘুড়ি ওড়ানো আকাশ... প্রেমে পড়লে কৃষ্ণচূড়ার লাল হয়না....অভিমানের শান্ত দিঘি হয়না... ভেঙে পড়লে বৃষ্টি হয়না...
এমনকী... বিপ্লবী হলে রক্তপাতও হয়না...
শহরের নাকি মন নেই...
শহর ভিখারীকে খাবার দেয়না, উলঙ্গ শিশুকে জামা দেয়না....প্রেমিক-প্রেমিকাকে আগল দেয় না.... বাড়িকে প্রতিবেশী দেয়না... মানুষকে আত্মীয় দেয়না....
শহরের নাকি মন নেই...
গান নেই... কবিতা.. ক্যানভাস নেই....
ওরা দুজন তখন একটা বন্ধ দোকানের ছাউনির তলায় পাশাপাশি...
রাস্তার মোড়ে যে জমায়েতটা হয়েছে তার থেকে বেশ খানিকটা আড়ালে...
ওখানের কোনো লোকই ভাবেনি এর'ম জরুরী সমাবেশ ওলটপালট করে দিয়ে এইরকম একটা ঝড় উঠবে!
মেঘ ডাকা,তুমুল বৃষ্টি... এলোপাথাড়ি উড়তে থাকা -দড়িতে লাগানো সার সার কাগজের দলীয় পতাকা,
নামীদামী গয়নার দোকান আর সুগন্ধীর হোর্ডিং কাঁপিয়ে হাহা করতে থাকা হাওয়া আর ধোঁয়াধুলোর শহুরে-আকাশ চিরে বিদ্যুৎ...
এসবের মধ্যে ওরা সামলে নিতে চাইছে ওদের নিজেদের ঝড়....
গত তিনদিন ধরে শুধু এলোমেলো কথা, জমাট চুপ করে থাকা, গুমোট বিকেল ওদের মতোই বলতে পারেনি অনেককিছু...
ভীষণ চঞ্চলতা নিয়ে তাই ওরা দেখা করেছিল এই ক্লান্ত সন্ধ্যেয়....
ঝড় ওঠার আগের মুহুর্ত অবধি তর্ক চলেছে, কেউ শুনতে চায়নি কথা, ভাঙতে চেয়েছে যুক্তি...
তারপর এই ওলোটপালট করা ঝড়...
তখন থেকে কথা হয়নি কোনো...
পাশাপাশি দাঁড়িয়ে মনে পড়েছে কথা... অনেক কথা...
মনে পড়েছে দু'জনেই কী অদ্ভুত ভাবে আক্রমণ করেছে একে অপরকে... সেইসব শব্দ... কানে বাজতে থাকা ওই কন্ঠস্বর...
কীভাবে ওরা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে একে অন্যের দূর্বলতা -হেরে যাওয়া গুলো....
মনে পড়েছে কীভাবে বোবা হয়ে গেছে দু'জনেই...
মনে পড়েছে ফোনের ওপারে শোনা কান্না,মনে পড়েছে ওরা কীভাবে নিজেদের বিপরীতে গিয়ে আঘাত করেছে একে অপরকে...
আর... এর সাথে মনে পড়েছে আরও গোপন... আড়ালের ব্যথাগুলো... যেগুলো ওরা আগলে রেখেছে আপ্রাণ...
নিজের ব্যথাগুলো ছাপিয়ে আরেকজনের যন্ত্রণাগুলো...
ওদের ঘিরে উন্মত্ত ঝড়...
নিজেদের কথাকাটাকাটি... নীরবতা... কান্না... দমবন্ধ হয়ে আসা ওই মুহূর্তগুলো... আরও ঝোড়ো হয়েছে ক্রমশ...
মনের মধ্যে হারিয়ে ফেলার একটা ভয় ঘন হয়েছে আরও.... আর সেই ভয়ের ভেতরে বদনাম আর বেনামী পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থেকেছে অনেক্ষণ...
বজ্রপাত আর সমাবেশের কর্কশ চিৎকার...
তারই মধ্যে দামাল হাওয়া... তীরের মতো মুখে এসে লাগা বৃষ্টির ছাট... পিচের রাস্তায় অবিশ্রান্ত জল আর সেই জলে পিচ্ছিল হয়ে ওঠা.. গাড়ির লাল-হলুদ আলো...
বিদ্যুতের গাঢ় গোলাপি আভা আর ছুটে যাওয়া আ্যম্বুল্যান্সের আওয়াজ...
ওদের ভেতরের ঝড়... অস্থিরতা.. বেড়েছে ওই ঝড়ের সঙ্গে সঙ্গে...
ওরা... পাশাপাশি দাঁড়িয়ে...
তারপর... সেই যখন ভীষণ জোরে বাজ পড়ল খুব কাছেই...
বদনাম... বেনামীর হাত শক্ত করে ধরে, তাকিয়ে ছিল চোখে...
বেনামীর চোখে তখন তিরতির করে কাঁপছে জল.. সেই জলে কাঁপছে বৃষ্টি আর বৃষ্টিতে মেশা শহরের আলো...
কেমন যেন অপরাধী হয়ে যাওয়া দু'হাতে ওকে আরও নিবিড় করে নিয়ে সেই চোখের আরও ভেতরে তাকিয়ে কী যেন খুঁজছিল বদনাম...
অস্ফুটে একবার বলেছিল- ভাল্লাগছেনা...
বেনামী.. আরও কাছে গিয়ে ঠোঁট রেখেছিল বদনামের ঠোঁটে...
বন্ধ চোখ থেকে তখন নেমে আসছে জল...
ঝড় থামছে...
বদনাম আর বেনামী, এবার পা ভিজিয়েছে জলে... ওদের বাড়িফেরা ভিজছে বৃষ্টিতে...
ওরা... আবারও কী চিনল?
মানুষের মন না মনের মানুষ...?
No comments:
Post a Comment